• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

কেন যুদ্ধের সময় ছেলেশিশু বেশি জন্ম নেয় 

প্রকাশ:  ১০ মার্চ ২০২২, ১৭:১৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

শত শত বছর ধরেই ছেলেশিশুর জন্মহার মেয়েশিশুর তুলনায় বেশি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রতি ১০০টি মেয়েশিশুর বিপরীতে ১০৭টি ছেলেশিশুর জন্ম হয়। অনেকেই নারীর তুলনায় পুরুষের মৃত্যুহার বেশি হওয়াকে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার কারণ বলে মনে করেন। শিশু জন্মহার নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছেন যুদ্ধ এবং যুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে ছেলেশিশুর জন্মহার বেশি থাকে। যদিও বিজ্ঞানীরা এর কোনো বিজ্ঞানসম্মত উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না।

কেউ কেউ মনে করেন, যুদ্ধে নিহত পুরুষ সৈন্যদের শূন্যস্থান পূরণে এটা প্রকৃতির এক ভারসাম্য রক্ষার উপায়। কারো মতে যুদ্ধফেরত সৈন্যরা দীর্ঘদিন পর সঙ্গীদের কাছে পেয়ে তুলনামূলক বেশি ঘনিষ্ঠ হবার ফলে নারী সঙ্গীদের ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার এবং ছেলেশিশু জন্মের সম্ভাবনার হার বেড়ে যায়। একে বলা হয় ‘রিটার্নিং সোলজার ইফেক্ট’। ‘ইভল্যুশনারি বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তত্ত্বগুলোকে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যক্তির পারিবারিক ইতিহাস কীভাবে সন্তানের লিঙ্গ সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।

যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির গবেষক কোরি জিলাটলি বলেন, বেশি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করছে বলেই ছেলেশিশু বেশি হয়, এ তত্ত্ব আমার বিশ্বাস হয়না। তিনি মনে করেন কোনো দম্পতির সন্তানের লিঙ্গ কী হবে, তা নির্ভর করে পুরুষ সঙ্গীর মা–বাবার সন্তানদের লিঙ্গের ওপর। অর্থাৎ কোনো পুরুষের সন্তানের লিঙ্গ কী হবে, তা নির্ভর করে তার ভাই-বোনের সংখ্যা ওপর।

এ বিজ্ঞানী বলেন, উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের ৯২৭টি পরিবারের পারিবারিক ইতিহাস গবেষণা করে দেখা গেছে, সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে, সেটা অনেকটাই উত্তরাধিকারসূত্রে নির্ধারিত। আমরা এখন জানি, যেসব পুরুষের ভাইয়ের সংখ্যা বেশি, তাদের ছেলেসন্তান বেশি। যদিও নারীদের ক্ষেত্রে এ প্রবণতা লক্ষণীয় নয়।

তিনি মনে করেন, পুরুষের দুটি ক্রোমোজোম XY এর কত অংশ X ক্রোমোজোম এবং কত অংশ Y ক্রোমোজোম বহন করবে, সেটি মূলত নির্ভর করে একটি জিনের ওপর। এ জিন নারী–পুরুষ উভয়েরই আছে, তবে পুরুষেরটি সক্রিয়। নারীর দুটি ক্রোমোজোমই যেহেতু XX, তাই পুরুষের বীর্যের XY ক্রোমোজোমই সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করে। তাই যত বেশিসংখ্যক Y ক্রোমোজোম থাকবে, সন্তান ছেলে (XY) হওয়ার প্রবণতা তত বেশি।

যুদ্ধ এবং যুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে ছেলেশিশুর জন্ম বেশি হওয়াতে এ মডেলের প্রভাব বোঝাতে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, জন ও রিচ নামের দুজনের কথা চিন্তা করা যাক। জনের তিন ছেলে, যারা সবাই যুদ্ধে গেছে এবং তার আরেকটি মেয়ে আছে, যে যুদ্ধে যায়নি। অন্যদিকে রিচের পারিবারিক কাঠামো বিপরীত—তিন মেয়ে, এক ছেলে। জনের ছেলে যেহেতু তিনজন, তাই তার ছেলেদের মধ্যে কারও না কারও যুদ্ধ থেকে বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা বেশি। এবং তারা যেহেতু ছেলে, তাই তাদের ক্রোমোজোমে Y এর উপস্থিতি থাকবেই। ফলে এ পরিবার থেকে তুলনামূলক বেশি ছেলে সন্তানের জন্ম হবে। রিচের যেহেতু এক ছেলে, তাই সে মারা গেলেই রিচ ছেলেশূন্য হয়ে পড়বে। আর যদি যুদ্ধে তার ছেলে বেঁচেও যায়, তাহলেও আনুপাতিক দিক থেকে এ পরিবারে মেয়েশিশুর হার বেশি হবে। জিলাটলির মডেল অনুসারে এতে ছেলে ও মেয়ের জন্মের আনুপাতিক হার স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এনজে

ছেলেশিশু,যুদ্ধ, জন্ম, মেয়েশিশু,ছেলেশিশু,যুদ্ধ, জন্ম, মেয়েশিশু,মেয়েশিশু,ছেলেশিশু,জন্ম,যুদ্ধ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close